জসীম উদ্ দীন এর জীবনী

জসীম উদ্ দীন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জসীম উদ্‌দীন
Jasimuddin.jpg
পল্লী কবি জসীম উদ্‌দীন
জন্মমোহাম্মাদ জসীম উদ্‌দীন মোল্লা
জানুয়ারি ১, ১৯০৩
তাম্বুলখানা, ফরিদপুর জেলাবেঙ্গল প্রেসিডেন্সিব্রিটিশ ভারত (বর্তমান বাংলাদেশ)
মৃত্যুমার্চ ১৩, ১৯৭৬ (৭৩ বছর)
ঢাকা, বাংলাদেশ
পেশাকবি
জাতীয়তাবাংলাদেশী
জাতিবাঙালি
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
শিক্ষাবাংলা ভাষা ও সাহিত্য
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়
ধরনকবিতা
উল্লেখযোগ্য রচনাসমূহ
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারএকুশে পদকস্বাধীনতা পুরস্কার

জসীম উদ্‌দীন (১ জানুয়ারি ১৯০৩ - ১৩ মার্চ ১৯৭৬) একজন প্রখ্যাত বাঙালি কবি।[১][২] তিনি বাংলাদেশে পল্লী কবি হিসেবে পরিচিত। তাঁর লেখা কবর কবিতাটি বাংলা সাহিত্যে এক অবিস্মরণীয় অবদান। পুরো নাম মোহাম্মাদ জসীম উদ্‌দীন মোল্লাহলেও তিনি জসীম উদ্‌দীন নামেই পরিচিত। নকশী কাঁথার মাঠ ও সোজন বাদিয়ার ঘাটকবির শ্রেষ্ঠ দুইটি রচনা। জসীম উদ্ দীনের কবিতা বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে।

জন্ম ও পারিবারিক পরিচিতি[সম্পাদনা]

তিনি ১৯০৩ সালের ১ জানুয়ারি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার বাড়ি ছিল একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। বাবার নাম আনসার উদ্দিন মোল্লা। তিনি পেশায় একজন স্কুল শিক্ষক ছিলেন। মা আমিনা খাতুন ওরফে রাঙাছুট।

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

জসীম উদ্ দীন ফরিদপুর ওয়েলফেয়ার স্কুল ও পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা স্কুল (বর্তমানে ফরিদপুর জিলা স্কুল) পড়ালেখা করেন। এখান থেকে তিনি তার প্রবেশিকা পরীক্ষায় ১৯২১ সনে উত্তীর্ণ হন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা থেকে বি. এ. এবং এম. এ. শেষ করেন যথাক্রমে ১৯২৯ এবং ১৯৩১ সনে।[১]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯২৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক "কবর" কবিতা নির্বাচিত হওয়ার পর ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে জসীম উদ্ দীন (সনদ হাতে)।
লন্ডনইংল্যান্ডে জসীম উদ্ দীন (১৯৫১)
১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ পর্যন্ত, দীনেশচন্দ্র সেনের সাথে লোক সাহিত্য সংগ্রাহক হিসেবে জসীম উদ্ দীন কাজ করেন। তিনি পূর্ব বঙ্গ গীতিকার একজন সংগ্রাহকও। তিনি ১০,০০০ এরও বেশি লোক সংগীত সংগ্রহ করেছেন, যার কিছু অংশ তার সংগীত সংকলন জারি গান এবং মুর্শিদা গান এ স্থান পেয়েছে। তিনি বাংলা লোক সাহিত্যের বিশদ ব্যাখ্যা এবং দর্শন খণ্ড আকারেও লিখে গেছেন।[৩]
১৯৩৩ সনে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. দীনেশচন্দ্র সেনের অধীনে রামতনু লাহিড়ী গবেষণা সহকারী পদে যোগ দেন। এরপর ১৯৩৮ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তিনি ১৯৪৪ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে এবং তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগে যোগ দেন। ১৯৬২ সালে অবসর গ্রহণের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি ডেপুটি ডিরেক্টর হিসেবে কাজ করে গেছেন। তিনি গুরু মৃত্যুন জয় সিলের কাছে গুণগ্রাহী ছিলেন।[১] ১৯৬৯ সনে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মান সূচক ডি লিট উপাধিতে ভূষিত করেন।
নকশী কাঁথার মাঠ
– জসীম উদ্ দীন
সখী দীন দুঃখীর যারে ছাড়া কেহ নাই
সেই আল্লার হাতে আজি আমি তোমারে সঁপিয়া যাই।
মাকড়ের আঁশে হস্তী যে বাঁধে, পাথর ভাসায় জলে
তোমারে আজিকে সঁপিয়া গেলাম তাঁহার চরণতলে।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

ফরিদপুরের অম্বিকাপুরে জসীম উদ্দীনের কবরস্থান
তিনি ১৩ মার্চ ১৯৭৬ সনে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাকে তাঁর নিজ গ্রাম গোবিন্দপুরে দাফন করা হয়। গোবিন্দপুরে প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে তার জন্মদিনকে স্মরণ করে জসীম মেলা নামে একটি পাক্ষিক উৎসব উদযাপন করা হয়।[৪] তার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে।
নিমন্ত্রণ
– জসীমউদ্দীন
তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,
গাছের ছায়ায় লতায় পাতায় উদাসী বনের বায়;
মায়া মমতায় জড়াজড়ি করি
মোর গেহখানি রহিয়াছে ভরি,
মায়ের বুকেতে, বোনের আদরে, ভাইয়ের স্নেহের ছায়,
তুমি যাবে ভাই – যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয়,

কাব্য[সম্পাদনা]

জসীম উদ্ দীন একদম অল্প বয়স থেকেই লেখালেখি শুরু করেন। কলেজে অধ্যয়নরত থাকা অবস্থায়, পরিবার এবং বিয়োগান্ত দৃশ্যে, একদম সাবলীল ভাষায় তিনি বিশেষ আলোচিত কবিতা কবর লিখেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাবস্থায় এই কবিতাটি প্রবেশিকার বাংলা পাঠ্যবইয়ে স্থান পায়।
কবর
– জসীম উদ্ দীন
ওইখানে তোর দাদীর কবর ডালিম গাছের তলে,
তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।
এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,
পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।
এখানে ওখানে ঘুরিয়া ফিরিতে ভেবে হইতাম সারা,
সারা বাড়ি ভরি এত সোনা মোর ছড়াইয়া দিল কারা।
সোনালী ঊষায় সোনামুখে তার আমার নয়ন ভরি,
লাঙ্গল লইয়া ক্ষেতে ছুটিতাম গাঁয়ের ও-পথ ধরি।
যাইবার কালে ফিরে ফিরে তারে দেখে লইতাম কত,
এ কথা লইয়া ভাবি-সাব মোর তামাশা করিত শত।
গাঁয়ের লোকের দৃষ্টিতে গ্রাম্য জীবন এবং পরিবেশ-প্রকৃতি ফুটিয়ে তোলার জন্য জসীম উদ্ দীন বিশেষভাবে পরিচিত। তার এই সুখ্যাতি তাকে পল্লি কবি উপাধি এনে দিয়েছে। তার কাব্যের গঠনপ্রণালী এবং বিষয়বস্তু পাঠককে বাংলা লোক সাহিত্যের প্রগাঢ় আস্বাদন এনে দেয়। তার রচিত নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থকে তার শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং পৃথিবীর অনেক ভাষায় এটি অনূদিত হয়েছে।
এছাড়াও জসীম উদ্ দীন গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী অনেক গান রচনা করেছেন। বাংলার বিখ্যাত লোক সংগীতের গায়ক, আব্বাসউদ্দীন, তার সহযোগিতায়[৫] কিছু অবিস্মরণীয় লোকগীতি নির্মাণ করেছেন, বিশেষত ভাটিয়ালী ধারার। জসীম উদ্ দীন রেডিওর জন্যেও আধুনিক গান লিখেছেন। তিনি তার প্রতিবেশী, কবি গোলাম মোস্তফার দ্বারা ইসলামিক সংগীত লিখতেও প্রভাবিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ে, তিনি বহু দেশাত্মবোধক গান লিখেন।

গ্রন্থাবলি[সম্পাদনা]

কাব্যগ্রন্থ
  • রাখালী (১৯২৭)
  • নকশী কাঁথার মাঠ (১৯২৯)
  • বালুচর (১৯৩০)
  • ধানখেত (১৯৩৩)
  • সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৪)
  • হাসু (১৯৩৮)
  • রঙিলা নায়ের মাঝি(১৯৩৫)
  • রুপবতি (১৯৪৬)
  • মাটির কান্না (১৯৫১)
  • এক পয়সার বাঁশী (১৯৫৬)
  • সকিনা (১৯৫৯)
  • সুচয়নী (১৯৬১)
  • ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে (১৯৬২)
  • মা যে জননী কান্দে (১৯৬৩)
  • হলুদ বরণী (১৯৬৬)
  • জলে লেখন (১৯৬৯)
  • কাফনের মিছিল ((১৯৮৮)
  • কবর
নাটক
  • পদ্মাপার (১৯৫০)
  • বেদের মেয়ে (১৯৫১)
  • মধুমালা (১৯৫১)
  • পল্লীবধূ (১৯৫৬)
  • গ্রামের মেয়ে (১৯৫৯)
  • ওগো পুস্পধনু (১৯৬৮)
  • আসমান সিংহ (১৯৮৬)
আত্মকথা
  • যাদের দেখেছি ((১৯৫১)
  • ঠাকুর বাড়ির আঙ্গিনায় (১৯৬১)
  • জীবন কথা ( ১৯৬৪)
  • স্মৃতিপট (১৯৬৪)
উপন্যাস
ভ্রমণ কাহিনী
  • চলে মুসাফির (১৯৫২)
  • হলদে পরির দেশে ( ১৯৬৭)
  • যে দেশে মানুষ বড় (১৯৬৮)
  • জার্মানীর শহরে বন্দরে] (১৯৭৫)
সঙ্গীত
  • জারি গান (১৯৬৮)
  • মুর্শিদী গান (১৯৭৭)
অন্যান্য
  • বাঙালির হাসির গল্প
  • ডালিমকুমার (১৯৮৬)

গানের শিরোনাম[সম্পাদনা]

  • আমার সোনার ময়না পাখি
  • আমার গলার হার খুলে নে
  • আমার হার কালা করলাম রে
  • আমায় ভাসাইলি রে
  • আমায় এতো রাতে
  • কেমন তোমার মাতা পিতা
  • নদীর কূল নাই কিনার নাই
  • ও বন্ধু রঙিলা
  • রঙিলা নায়ের মাঝি
  • নিশ্তে যাইও ফুলবাণে, ও ভোমরা
  • ও বাজান চল যাই মাঠে লাঙল বাইতে
  • প্রানো শখি রে ঐ শুনে কদম্ব তলে
  • ও আমার দরদি আগে জানলে
  • বাঁশরি আমার হারাই গিয়াছে
  • বালু চরের মেয়া
  • বাদল বাঁশি ওরে বন্ধু
  • গাঙ্গের কূলরে গেলো ভাঙিয়া
  • ও তুই যারে আঘাত হানলিরে মনে
  • ও আমার গহীন গানের নায়া
  • আমার বন্ধু বিনুধিয়া
[৬]

পুরস্কার[সম্পাদনা]

চিত্রসম্ভার[সম্পাদনা]

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.