‘এই প্রজন্ম ধর্মে বিমুখ তা নিয়ে কিছু সংক্ষেপ আলোচনা,
‘এই প্রজন্ম ধর্মে বিমুখ তা নিয়ে কিছু সংক্ষেপ আলোচনা,
লিখেছেন: হিউম্যানিস্ট বা... — বৃহস্পতি, 11/30/2017 - 20:35
চিরকাল বিশ্বাস করেছি পৃথিবীর "ফাস্টেস্ট গ্রোইং রিলিজিওন" (সবচেয়ে প্রসারমান ধর্ম) হল ইসলাম৷ বটেই তো৷ বিশ্বময় মুসলিম পরিবারে সন্তানের সংখ্যা অন্যদের চেয়ে বেশী, পশ্চিমা দেশে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করছে তাতে এটাই তো হবার কথা৷ বিশ্বাসটা প্রথম ধাক্কা খায় বছর ৫-৭ আগে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপের খবরে, সেখানে ৬৭% ছাত্রছাত্রীই নাস্তিক৷ তারপর থেকে ব্যাপারটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে খেয়াল করেছি, বিভিন্ন দেশে প্রজন্মকে সুযোগ পেলেই প্রশ্ন করেছি, ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে বহুকাল থেকে যা ছিল অন্তর্লীন ফল্গুধারায় প্রবহমান সম্প্রতি তা উচ্ছ্বল জলধিতরঙ্গে রূপ নিয়েছে৷ সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতি:-
• ইউরোপের অনেকে দেশে এখন নাস্তিকরাই সংখ্যাগুরু….
• চীনে ৬১% মানুষ সরাসরি স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করে……
• সুইডেনে ৮% মানুষ উপাসনালয়ে ধর্মচর্চা করে, ৭৬% নাস্তিক…
• চেক প্রজাতন্ত্রে ১২% মানুষ গির্জায় ধর্মচর্চা করে…৭৫% নাস্তিক…
• ব্রিটেনের ৫৩% জনের কোনো ধর্মবিশ্বাস নেই….
• হংকং-এ ৬২% নাস্তিক
• জাপানে ৬২% নাস্তিক
• জার্মানিতে ৫৯% নাস্তিক
• স্পেনের নাগরিকদের বড় একটা অংশই নাস্তিক
• অস্ট্রিয়ার নাগরিকদের বড় একটা অংশই নাস্তিক
• ফ্রান্সের নাগরিকদের বড় একটা অংশই নাস্তিক।
• চীনে ৬১% মানুষ সরাসরি স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করে……
• সুইডেনে ৮% মানুষ উপাসনালয়ে ধর্মচর্চা করে, ৭৬% নাস্তিক…
• চেক প্রজাতন্ত্রে ১২% মানুষ গির্জায় ধর্মচর্চা করে…৭৫% নাস্তিক…
• ব্রিটেনের ৫৩% জনের কোনো ধর্মবিশ্বাস নেই….
• হংকং-এ ৬২% নাস্তিক
• জাপানে ৬২% নাস্তিক
• জার্মানিতে ৫৯% নাস্তিক
• স্পেনের নাগরিকদের বড় একটা অংশই নাস্তিক
• অস্ট্রিয়ার নাগরিকদের বড় একটা অংশই নাস্তিক
• ফ্রান্সের নাগরিকদের বড় একটা অংশই নাস্তিক।
অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যাণ্ডেও অন্যরকম হবার কারণ নেই৷ যেহেতু পশ্চিমা বিশ্বের সব কিছুই আমাদের দেশগুলোকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে তাই ওই ধাক্কাটা এশিয়ার দেশগুলোতেও গিয়ে লাগছে ও আরো লাগবে৷ কারো পছন্দ হোক বা না হোক এ বাস্তবের সামনে দাঁড়াতেই হচ্ছে দুনিয়াকে৷ কয়েক দশক পরেই বিশ্ব-সমাজকে এক নুতন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে, বদলে যাবে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক সমীকরণ৷ এখন দেখা যাক এটা ঘটছে কেন৷ অনেকের অনেক মতামত থাকবে নিশ্চয়ই কিন্তু শুধু বিশ্বাস দিয়ে বাস্তবের বিশ্লেষণ সম্ভব নয়৷
(১) গণতন্ত্রকে কুক্ষিগত করে পুঁজিবাদ অর্থাৎ ক্যাপিটালিজম বিশ্বময় এক ভয়ানক ভোগবাদী জীবনধারা ও জীবনবোধ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে৷ বিশেষ করে পশ্চিমা প্রজন্মের বিশাল অংশ এখন বিশ্বাস করে "যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ, ঋনং কৃত্ত্বা ঘৃতং পিবেৎ" - অর্থাৎ "নগদ যা পাও হাত পেতে নাও বাকীর খাতায় শূন্য থাক, দুরের বাদ্য লাভ কি শুনে মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক"! সেখানে ধর্ম, মহাপুরুষ ও ধর্মগ্রন্থের জায়গাও নেই দরকারও নেই, স্রেফ আনন্দ করে গেলেই জীবন সার্থক৷ পশ্চিমা দেশগুলোর আইনও এটাকে সমর্থন করে - একটাই জীবন তোমার, নিজ কর্মের দায়িত্ব নিয়ে অন্যের অধিকার খর্ব না করে বা অন্যকে কষ্ট না দিয়ে জীবন উপভোগ করে যাও৷
এর মধ্যে নারী-পুরুষের অবাধ সংসর্গও অন্তর্ভুক্ত৷ যৌবন এক পরাক্রান্ত শক্তি৷ জীবনের ষড়রিপু (ছয় শত্রু) - কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য্য - তার প্রথমটাই হল কাম যা মানুষকে প্রবলভাবে তাড়িত করে৷ পরস্পরের সম্মতি থাকলে সাবালক নরনারীর মিলন অবৈধ নয়, পশ্চিমা দেশগুলোর এ আইনের পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে প্রজন্ম৷ ধর্মগুলো বিয়ের বাইরে দৈহিক সংসর্গের বিরোধী এবং পশ্চিমা প্রজন্মের অবাধ যৌনতায় বড় বাধা৷ কিন্তু এই আইনি অধিকার পশ্চিমা প্রজন্ম পেয়েছে সেটা তারা কিছুতেই ছাড়বে না - দরকার হলে ধৰ্মই ছেড়ে দেবে - এ প্রবণতাও রয়েছে৷ প্রজন্মের এই প্রবণতা আমাদের দেশগুলোতেও বাড়ছে৷
(২) ধর্মই নৈতিকতার ভিত্তি, এ দাবীও অসার প্রমাণিত হয়েছে৷ কারণ ধর্মহীন বা ধর্মে উদাসীন অথচ প্রবলভাবে আধ্যাত্মিক, উদার ও মানবিক গুণাবলীতে আলোকিত মানুষের অজস্র উদাহরণ চারদিকে ছড়িয়ে আছে৷ তাঁরা কারো ক্ষতি করেন না ও বিপদ-আপদে সর্বশক্তি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান৷ হিন্দু সমাজে বিধবা-বিবাহ প্রতিষ্ঠার নায়ক পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র কিংবা আফ্রিকাতে প্রধানত: মুসলিম সমাজে ইসলামের নামে ভয়ংকর বর্বর প্রথা নারীর খৎনা উচ্ছেদে সর্বাত্মক চেষ্টাকারী রুডিজার নেহবার্গ দুজনেই ধৰ্মহীন৷ দুর্ভাগ্যক্রমে গীর্জা, মন্দির ও মসজিদ মাদ্রাসা ইত্যাদির অনেক ধর্মগুরুর ব্যক্তিগত হিংস্রতা, হানাহানি ও অশ্লীলতার খবরও প্রজন্ম জানছে৷ যেহেতু ধর্মগুরুদের ভাবমূর্তির ওপরে ধর্মের ভাবমূর্তি অনেকটাই নির্ভর করে তাই এটাও ধর্মের ওপরে প্রজন্মের বিতৃষ্ণার একটা বড় কারণ৷
(৩) "ম্যান ডাজ নট লিভ বাই ব্রেড অ্যালোন"- জীবনের স্রোত প্রয়োজনের তাড়নায় প্রবাহিত হয়৷ খাদ্যের পাশাপাশি মানুষের আধ্যাত্মিক প্রয়োজন আছে যেখানে ধর্মবিশ্বাসের বিকল্প নেই৷ এই আধ্যাত্মিক প্রয়োজনটাই হারিয়েছে এ প্রজন্মের বিশাল অংশ৷ এখন তাদের প্রয়োজন প্রধানত: পার্থিব, অর্থাৎ দুনিয়াদারীর৷ তাদের চাই টেকনোলজি’র সর্বশেষ সংস্করণ, চাই পার্টি, নুতন মডেলের গাড়ী, বাড়ী, আরো ভালো চাকরী বা নিজের ব্যবসা, তারা চায় দেশে দেশে ভ্রমণ করতে ইত্যাদি৷ এসব প্রয়োজন ধর্ম মেটাতে পারছেনা কারণ ওটা ধর্মের কাজই নয়৷ ধর্মের কাজ হেদায়েত করা এবং নৈতিকতা ও মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা যার ধারও ধারছেনা এ প্রজন্মের বিশাল অংশ৷ যা প্রয়োজন মেটাতে পারেনা তা প্রাকৃতিক নিয়মেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে ও শেষ পর্য্যন্ত পরিত্যক্ত হয়৷ প্রজন্মের বিশাল অংশ ধর্মের মাধুর্য্য জানেনা, ধর্মের আবেদন তাদের কাছে নেই৷
(৪) অভিজ্ঞতা কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করেনা৷ প্রজন্ম সম্প্রতি দেখছে ধর্মের উৎস থেকে উঠে এসেছে ভয়াবহ গণহত্যা, গণধর্ষণ, ব্যাপক হিংস্রতা ও ধ্বংসযজ্ঞ৷ ইতিহাস ঘেঁটে তারা দেখেছে অন্য ধর্মের উৎস থেকেও অতীতে প্রবাহিত হয়েছে অগণিত নিরপরাধীর রক্ত ও অশ্রুস্রোত৷ হিংস্রতা, যুদ্ধ, রক্তক্ষয় অন্যান্য কারণেও হয় এবং তার ব্যাখ্যা সম্ভব৷ কিন্তু সেটা যখন স্রষ্টার নামে হয় তখন তা ব্যাখ্যার অতীত হয়ে দাঁড়ায়৷ প্রজন্ম জানেনা কোনো ধর্মই হিংস্রতা শেখায় না৷ জানেনা যে ওগুলো ধর্মের অপব্যবহার মাত্র - কতিপয় শক্তিশালী ধর্মগুরুর হিংস্রতা মাত্র৷ তাঁদের অপকর্মের দায় গিয়ে পড়ে ধর্মের ওপরে৷ তাহলে ধর্মের সত্যতা যাচাই করার সুযোগ মানুষের কাছে নেই।আবার মানুষকে যারা ধর্ম শিখায় তাঁরাই ধর্মকে তাদের ব্যক্তিগত সুবিধার লগ্নি বানিয়ে রাখছে।নিজেদের বাঁচাতে ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারন মানুষকে প্রতিনিয়ত বোকা বানাচ্ছে।
এছাড়া আছে রূপকথা৷ ধর্মের মধ্যে অনেক অবৈজ্ঞানিক, অবাস্তব ও হাস্যকর রূপকথা ঢুকে পড়েছে৷ ইসলামের কথাই যদি বলি, কোরাণে আছে ব্যভিচার বর্জন করার নির্দেশ, ব্যাভিচারের শাস্তি আজীবন ঘরবন্দী অথবা আল্লাহ অন্য কোন পথ নির্দেশ না করা পর্যন্ত, আছে ব্যভিচারী নারী-পুরুষকে একশ’করে চাবুক (সুরা বনি ইসরাইল ৩২, মুমতাহানা ১২, নিসা ১৫, নূর ২ ইত্যাদি)। কিন্তু শারিয়া আইনে ব্যাভিচারের শাস্তি বিবাহিতদের মৃত্যুদণ্ড ও অবিবাহিতদের চাবুক (হানাফি আইন হেদায়া পৃষ্ঠা ১৭৮, বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড, ধারা ১২৯, পাকিস্তানের হুদুদ আইন ৭-১৯৭৯, অর্ডিন্যান্স ২০-১৯৮০ দ্বারা পরিবর্তিত, আইন নম্বর ৫ (২)-এর “অ” ইত্যাদি)। সুত্রগুলো মোটা দাগে দিলাম, বিস্তারিত আছে "শারিয়া কি বলে, আমরা কি করি" বইতে৷ আসলে মৃত্যুদণ্ডটা এসেছে কোরানের একটা “ছাগলে খাওয়া” আয়াত সম্পর্কিত হাদিস থেকে। কারো দরকার হলে কেতাবের পৃষ্ঠাটার স্ক্যান কপি পাঠানো যাবে। সহি ইবনে মাজাহ ৩য় খণ্ড হাদিস ১৯৪৪, উদ্ধৃতি দিচ্ছি বাংলা করে:- “বর্ণিত আছে যে বিবি আয়েশা (রাঃ) বলিয়াছেন, ‘রজমের আয়াত নাজিল হইয়াছিল। অবশ্যই ইহা একটি কাগজের উপরে লিখা হইয়াছিল যাহা আমার কুশনের নীচে রাখা ছিল। রসুল (দঃ)-এর ইন্তেকালের পর আমরা যখন তাঁহার সৎকার করিতে ব্যস্ত ছিলাম তখন একটি গৃহপালিত ছাগল ঘরে ঢুকিয়া উহা খাইয়া ফেলে।”
এ হাদিসের ব্যাখ্যায় মধ্যপ্রাচ্যের মওলানা ওয়াজে বলেছেন - "ছাগলটি বেহেশত হইতে আসিয়াছিল"৷ মওলানার খেয়াল নেই, আল্লাহ বলেছেন তিনি এ কেতাব নাজিল করেছেন এবং তিনিই এটা সংরক্ষণ করবেন - সুরা হিজর ৯।
এখন আপনারাই বলুন, এসব উদ্ভট ব্যাখ্যা প্রজন্ম মানবে কেন? তাই এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে তাদের এক বড় অংশের কাছে ধর্ম একটা ভীতিকর, হাস্যকর ও বর্জনীয় কিছুতে পরিণত হয়েছে৷ আক্ষরিক অর্থে ধরা হয়েছে সবকিছু, ভয়াবহভাবে উপেক্ষিত হয়েছে সুরা ইমরান ৭ - এই কেতাবের সুস্পষ্ট অংশটাই আসল অংশ, বাকীটুকু রূপক, অর্থাৎ প্রতীক মাত্র৷
No comments