একটি সুন্দর রৌদ্রজ্জ্বল দিনের অপেক্ষায়_



(১) শাক্য বংশের রাজপুত্র ছিলেন সিদ্ধার্থ। পরবর্তীতে রাজ্য ত্যাগ করে অতিসাধারন জীবনধারন শুরু করেন এবং গভীর বনবাসে সিদ্ধি আরাধনায় লিপ্ত থেকে বুদ্ধ নামে পরিচিত হন। তার গোত্রীয় নাম ছিলো গৌতম। এই কারণে ইতিহাসে তিনি গৌতম বুদ্ধ নামে পরিচিতি পান। বুদ্ধ মানে যতটুকু জানা যায় অসীম জ্ঞানের ভান্ডার। আর বুদ্ধ দিনে দিনে হয়ে উঠেছিলেন অধিক জ্ঞানের অধিকারী, বাস্তববাদী, কর্মবাদে বিশ্বাসী। তিনি ছিলেন একাধারে নান্দনিক প্রকৃতিবাদী এবং জ্ঞান আহরণকারী জাগতিক একজন দার্শনিক। তার দর্শনকে যারা অনুসরণ করেন, তথা পালন করেন তারাই বৌদ্ধ নামে পরিচিত। বুদ্ধ প্রাকৃতিক জীবন চক্রের মধ্যেই মুক্তির পথ ও উপায় তাঁর দর্শনে প্রতিনিয়ত ব্যাখ্যা করেছেন। তাই অনেকে মত দিয়েছেন বুদ্ধের Buddhism কোন ধর্ম নয়, এটা একটা নিগাদ Philosophy or Way of life. বুদ্ধই বলেছেন জম্ম মাত্রই দু:খ, জম্মিলে মরিতে হবে; লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু। তাই দু:খ ও তৃঞ্চার ক্ষয় করতে পারাটাই জীবনের মুক্তি।
বুদ্ধই আরো বলেছেন, ‘সব্বে সত্তা সুখিতা হোন্ত।’ বাংলা করলে দাঁড়ায়, সব সত্তা সুখী বা জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক, দুঃখ হতে মুক্তি লাভ করুক। তিনিই একমাত্র যিনি- মানুষসহ সকল প্রাণী কূলের (সেই মুসলমান, হিন্দু, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ যে অনুসারী হোক না কেন) দু:খ হতে মুক্তি চেয়েছেন। আর সকল প্রকার প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন, সেই প্রাণী একটি মশা হলেও। তাঁর অসীম বাণী আরেকটি- ভোগই দু:খ, ত্যাগই সুখ। দেখা যায় যত ভোগের চিন্তা আসে, ততই দু:খ বাড়ে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায় সেকারনে তিনি রাজ্যের ক্ষমতা, ধন-ধৌলত, পরিবার ত্যাগ করে নিভৃত সন্ন্যাসী জীবন গ্রহন করেছিলেন।
আরো উল্লেখ্যযোগ্য Study করে যতটুকু পেয়েছি একমাত্র বৌদ্ধ ধর্ম বা দর্শনে সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস নেই। তবে বিজ্ঞান ও কর্মবাদে অগাধ বিশ্বাস রয়েছে এবং রয়েছে সম্যক দৃষ্টির প্রতি অনাবিল আস্থা। অন্যদিকে দেখা যায় যেদেশে যত আল্লাহ্, ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার বিশ্বাস বেড়েছে, সে দেশে তত হানাহানি, মারামারি, হিংসা-বিদ্বেষ, অরাজকতা, অনিয়ম, লোভ-লালসা বেড়েছে। তাই নি:সন্দেহে মানুষের হৃদয়ে মানববাদ, মানবিকতা, অহিংসায় পরম ধর্ম লালন করাটায় শ্রেয় হয়ে উঠা জরুরি হয়ে পড়েছে।
(২) কিন্তু দেশে এমন কিছু মানুষ আছেন, প্রকৃতিতে একটি পিঁপড়ে যে অবদান রাখেন, তাও তারা রাখছেন না। বরং পিঁপড়েগুলো ক্ষুদ্র হলেও বিশ্ব প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় নিরলস সংগ্রাম করছে। তাই মানুষরূপী অমানুষদের মূর্খতা-বিশ্বাস অন্ধকারকেও হার মানাচ্ছে দিনে দিনে। প্রকৃতির প্রতিকূল পরিবেশকে তারা বোঝার চেষ্টা না করে গনজমায়েত হয়েছেন। করোনাভাইরাসকে প্রতি পদে পদে অবহেলা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে অযাচিত আলিঙ্গনও করেছেন। রাষ্ট্রযন্ত্র এবং তার সরকারও প্রয়োজনে নিশ্চুপ থেকেছেন। এখন সামনে তার জন্য কঠিন দিন ও টিকে থাকার জন্য পরীক্ষা দিতে হবে দেশের জনগণকে।
(৩) অথচ ষড়ঋতুর দেশ, একদা নদীমার্তৃকায়, পাহাড়-পর্বতে, ফুলে-ফলে, পাখিদের কলকাকলীতে ভরপুর কতো সুন্দর মনোরম প্রকৃতির রূপ ছিলো পরিবেশ। প্রকৃতি কবি জীবনানন্দ দাশ, মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলাম, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মহাকবি মাইকেল মধূসূধন দত্ত সহ আরো কতো মহান কবি, সাহিত্যিক ব্যক্তিদের পদধূলি যে দেশে, সেদেশে এখন অনিয়মে ভরে গেছে, নিয়ম পরিণত হয়েছে অনিয়মে। মায়া হয় সত্যি মায়া হয়, প্রিয়জনদের মুখগুলো ভেসে উঠে মনের আঙ্গিনায়। এই মহাদুর্যোগময় বিপদে বন্ধু, আত্মীয়স্বজন, সবাই যেন ঠিকে থাকার শক্তি পায়, মনোবল যেন তাদের অটুট থাকে এই কামনা করছি সবসময়। প্রকৃতি যেন তাদের জন্য কিছুটা হলে সহায় হয়। কুসংস্কার উপেক্ষা করে মানুষের মৌলিক মনবিকতাগুলো যেন পদে পদে জাগ্রত হয়।
ভালো থাকুক দেশ, ভালো থাকুক সবাই, বিশ্বাস করি অন্ধকার কাটিয়ে নতুন রৌদ্রজ্জ্বল দিন আসবে অবশ্যই।

(Copyright:Istishon.blog) 

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.