আমরা চাই কুসংস্কার মুক্ত এবং সচেতন মানুষের বাংলাদেশ।

আমরা চাই কুসংস্কার মুক্ত এবং সচেতন মানুষের বাংলাদেশ।





সম্প্রতি বাংলাদেশ আসাদুজ্জামান নূর নামের একজন ইউটিউবার (ভিডিও ব্লগার) আটক হওয়াকে কেন্দ্র করে দেশে বিদেশে বেশ কিছু নিউজ মিডিয়া তাকে নিয়ে ইতিবাচক ও নেতিবাচিক অনেক কথায় লিখেছেন, যা কারো নজরে পড়তে আসলে বাকি থাকার কথা না। আসাদ নূর মোটামুটি বাংলাদেশ ভারত সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের বাংলাভাষী মানুষদের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই একজন পরিচিত মুখ ছিলেন। তবে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে ইসলাম ধর্মের কঠোর সমালোচনা করার কারনে সে অনেক আগে থেকেই এক শ্রেনীর মানুষের রোষানলে পড়েন। তাই তাকে বিভিন্ন সময়ে গা ঢাকা দিয়ে থাকতে হয়েছে। এমনকি তার নামে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে তথ্য ও প্রযুক্তি আইনের আওতায় ৫৭ ধারায় একটি মামলাও করা হয়েছিলো। এরপর বেশ কিছুদিন আমরা তার ভিডিও খুব একটা দেখতে পারিনি অনলাইন মাধ্যম গুলাতে। যথা সম্ভব সে অনলাইনে কম এক্টিভ ছিলো কিছুদিন। সম্প্রতি তার বাংলাদেশে আটকের ঘটনায় মানুষ আবারও তার সম্পর্কে জানতে পারলো।
আমরা সবাই কমবেশি জানি বাংলাদেশে মুক্তভাবে কথা বলার অধিকার কারও নেই। এই দেশে আইন করে তা বন্ধ করা আছে। বাংলাদেশে এমন কিছু আইন আছে যা ব্যবহার করে এই দেশের প্রতিটি মানুষকেই আইনের আওতায় আনা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে যে বা যারাই এই আসাদ নূর এর মতো ব্লগারদের পক্ষে কথা বলবে তারা সবাই এই দেশের সেই শ্রেনীর মানুষের দ্বারা বিতর্কিত হবে এটা সকলেরই জানা কথা। কারণ আসাদ নূর যেভাবে এতোদিন সমালোচনা করেছে তাতে করে তার পক্ষে কথা বলার মানুষের থেকে বিপক্ষে কথা বলা মানুষের সংখ্যা এখন বেশি হবে এই দেশে। বাংলাদেশের ধার্মীকদের একটি ভূল ধারনা আছে বাক স্বাধীনতা নিয়ে। তারা মনে করে বাক স্বাধীনতা হচ্ছে কেউ মুক্তভাবে চিন্তা করে কিছু লিখলে তার লেখার সমালোচনা না করে সেই ব্যাক্তির সমালোচনায় তার চোদ্দগুষ্টিও উদ্ধার করে ফেলাকে বাক স্বাধীনতা বলে। এদের সিংহভাগ বাংলাদেশের বিভিন্ন মাদ্রাসার ছাত্র আর নয়তো গোড়া ধার্মীক। তারা বিভিন্ন সময় অনেক ব্লগারের লেখার সমালোচনা না করে তাদের সমালোচনাতেই বেশি সময় ব্যয় করে থাকে। আমারও এই অভিজ্ঞতা কম না। আসলে কিন্তু তাদের কারো সাথে আমার ব্যাক্তিগত কোন পরিচয় নেই, শুধু ভার্চুয়ালে ও সোস্যাল মিডিয়াতে লেখা দেখেই তারা এমন আচরন করে থাকে। তারা এটা ভুলে যায় যে, আসলে কিন্তু প্রতিবাদের রাস্তা খোলা আছে বা কেউ যদি ভুল কিছু বা মিথ্যা কিছু বলে থাকে বা লিখে থাকে সেটার বিপক্ষে বলার অধিকার তারও আছে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে তারা সেটা না করে লেখককে ব্যাক্তি আক্রমন করতে তাদের সময় ব্যয় করে থাকে।
Freedom of speech বলতে আমরা যা বুঝি এই বাংলাদেশের ধার্মীকরা তা বুঝে না, তারা মনে করে থাকে মুক্তমনারা যা করে তাকে Heat of speech বলা হয়। কারন তারা শুধু ধর্মেরই সমালোচনা করে, তাও আবার শুধুই ইসলাম ধর্মের সমালোচনা করে। আবার আরেকটা সমস্যা দেখা যায় এখানে, যেমন অনেক হিন্ধু ধর্মাবলম্বী আছে যারা কোন মুক্তমনা লেখকের ইসলাম ধর্মের খারাপ দিক গুলো তুলে ধরে কিছু লেখা দেখলেই হাতে তালি দেয় আর যখনই হিন্ধু ধর্মের সমালোচনা করা হয় তখন সেই তারাই আবার তাদের পুর্ণ জীবনে শেখা সকল খারাপ ভাষার ব্যবহার করা শুরু করে দেয়। বিপরিত ভাবেও একই আচরন ঘটে থাকে। এরকমই হচ্ছে বাংলাদেশের ধার্মীকদের মধ্যে বাক-স্বাধীনতা ধারনা । আমার মতে কথা বলার অধিকার সকলেরই থাকা উচিত সবাই কথা বলবে। আপনার যা খুশি আপনি তাই বলবেন, ধর্ম নিয়ে বলবেন, রাজনীতি নিয়ে বলবেন, কোথাও অন্যায় হতে দেখলে তা বলবেন, মানব সভ্যতা ও মানব জাতির জন্য কোন কিছু হুমকি স্বরুপ বলে মনে করলে আপনি তার বিরুদ্ধে বলবেন এবং অবশ্যয় বলবেন। কিন্তু তার মানে এই না যে ভাষার সঠিক ব্যবহার বা মার্জিত বা সামাজিক বলে যে কথাগুলা আছে তা আপনি ভুলে যাবেন। আপনাকে এই বিষয় গুলি মাথায় রেখে কথা বলতে হবে। বলতে হবে শালীনতা বজায় রেখে।
মুক্তভাবে যারা চিন্তা করে বা সমাজের প্রথাবিরোধী আন্দোলনের সাথে যারা জড়িত আছে দীর্ঘদিন ধরে, যারা কুসংস্কার আর গোড়ামীর বিরুদ্ধে লিখে আসছে ও বিভিন্ন ভিডিও ব্লগিং এর মাধ্যমে বলে আসছে তারা আসলে সবসময় এই বিষয়গুলি মাথায় নিয়েই কাজ করে। তাই এমন কিছু ভাবার দরকার নেই যে আসাদ কাউকে ব্যাক্তি আক্রমন করে কোন সমালোচনা করেছে। সে যদি সমালোচনা করে থাকে তাহলে গোড়ামীর বিরুদ্ধে করেছে। আপনারা যারা তার ফাঁসির দাবীতে আন্দোলনে যেতে চাচ্ছেন তারা একটিবার ভেবে দেখুন সে কি আপনাদের কাউকে ব্যাক্তিগত আক্রমন করে কোন কথা বলেছে ? না আপনার সাথে তার জমিজমা নিয়ে আগে বিরোধ ছিল তাই আপনি আসাদ নূর গ্রেপ্তারের কথা শুনে তার ফাঁসির দাবীতে রাস্তায় নামতে চাচ্ছেন কোনটা ? কি এমন অনুভূতি আপনার যে একজন আসাদের কিছু ভিডিও দেখেই তাতে আঘাত লেগে যায়। আগে অনুভূতিকে একটু শক্ত করুন। আসাদ ভুল কিছু বলে থাকলে আপনিও তার বিপক্ষে ভিডিও বানান আর আপলোড করুন। আপনার কথা বলুন। এটা না করে আপনারা সেই কথা বলার অধিকার কেড়ে নেবার পক্ষেই যাচ্ছেন। এতে করে যে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষের সাথে সাথে আপনারও কথা বলার অধিকার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেটাও খেয়াল করুন।
অবশ্যয় বাক স্বাধীনতার কিছু সীমা আছে। নিজের ইচ্ছা মতো রাস্তার উলটা সাইড দিয়ে যেমন গাড়িচালানো যায়না তেমনি নিজের ইচ্ছা মতো যাকে তাকে যা খুশি তাই বলা যায়না যদি তার বিরুদ্ধে সেই সমস্ত উল্লেখ করা অভিযোগ না থাকে। বর্তমানে বাংলাদেশে বাক স্বাধীনতার বিপক্ষে যে কয়েকটি আইন প্রচলিত আছে তাতে এই বাক স্বাধীনতার সীমা আসলে কতটুকু সেটা খুবই ঘোলাটে এবং বিতর্কিত একটা ইস্যু হয়ে আছে। বর্তমানে ভার্চুয়াল জগতে বাংলাদেশের মানুষের অনলাইনে এক্টিভিটির কারনে সেটা আবার আরেক মোড় নিয়েছে। সামনা সামনি কেউ কারো সাথে যে কথায় বলুক না কেন তাতে বলার একটা ভঙ্গী আমরা সামনা সামনি দেখতে পায় যেখানে আমরা ধারনা করে নেই এই মানুষটি আসলে কি বলতে চাচ্ছে। কিন্তু অনলাইনে লেখা আর ভিডিও ব্লগিং দেখে বা পড়ে কিন্তু অনেক সময় মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে। তাই কিছু আইন থাকার দরকার আছে তবে একটি জাতিকে পুরাটায় বোবা বানিয়ে রাখা সেই আইন হতে পারেনা। বাংলাদেশের মানুষকে মনে রাখতে হবে মানুষের কথা বলার মাধ্যমেই কিন্তু আলোচনার রাস্তা খোলা হবে। আর যত আলোচনা হবে ততই একটি মতবাদের ফাইন্ডেশন শক্ত হবে। আর যদি তা না করা হয় তাহলে আমাদের থেকে বিশ্ব এগিয়ে যাবে আমরা সেই পিছনে তো পেছনেই পড়ে থাকবো।
---------- মৃত কালপুরুষ
২৭/১২/২০১৭

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.