হাজি আলি দরগার কেন্দ্রস্থলে ঢুকতে পারে না মহিলারা
গত 25 শে অাগস্ট বম্বে হাইকোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দেয়- এবার থেকে মহিলারা ও হাজি আলি দরগার কেন্দ্রস্থলে (ভারতে) ঢুকতে পারবেন। কার্যত 2012 সালের আগে পর্যন্ত মহিলারা দরগার কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ করতে পারতেন কিন্তু তারপর থেকে দরগার ট্রাস্টিরা মহিলাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়। এখন আমার প্রশ্ন হল এই দারগার ট্রাস্টিরা কি আগে ধর্মের নিয়ম জানতেন না, যে 2012 সালের পর থেকেই মেয়েদের দরগার কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ নিষিদ্ধ? এরা যুক্তি দেয়-“এক মুসলিম পুরুষ ধর্মগুরুর সমাধিস্থলে কোন ও মহিলার প্রবেশ ইসলামে মহাপাপ বা গুনাহ এর সমান”। কি অদ্ভুত যুক্তি? আমার প্রশ্ন শুধু মেয়ে হওয়ার কারণেই দরগায় প্রবেশ নিষিদ্ধ, এটা কতটা যৈক্তিক ও কতটা ন্যায় সংগত?
এখনে উল্লেখকরি আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনেকরি মেয়েরা ধর্মপালন করলো, কি করলো না সেটা তাদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার। তবে এটা দেখেছি মেয়েরা ধার্মিক হলে, সমাজে ধার্মিকতা বৃদ্ধি পায়।
বাস্তব অভিজ্ঞতাই দেখেছি- মেয়েরা ছেলেদের তুলনায় ধর্মের প্রতি অনেক বেশি শ্রদ্ধাশীল। আমার মা আমার বাবার অপেক্ষায় অনেক বেশি ধার্মিক। আমার বোনকে ধর্মের ব্যাপারে সামালোচনা করে কিছু বললে সে রেগে যায়। তাহলে, আমার প্রশ্ন হল এই সমস্ত শ্রদ্ধাশীল মুসলিম নারীদের শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণে দরগা, মসজিদে কেন তাদের যেতে দেওয়া হবে না? কেন তারা পারবে না নিজের ধর্ম পালন করতে? কেন যোগ্য মহিলা হতে পারবে না মসজিদের ইমাম? কেন নারীর জন্য শেষ কাতার হল সবচেয়ে উত্তম? তাহলে ধর্ম তাদের কি রকম মর্যাদা দিল? তাহলে আমরা কিভাবে দাবি করি ইসলাম নারীকে দিয়েছে সর্বোচ্চ সন্মান?
বস্তুত ইসলাম ধর্মে নারীদের ঠিক কি রকম মর্যাদা দেওয়া হয়েছে তা বিবেচ্য:-
1):- নারীর অবস্থান পুরুষের নিচে(Quran 4:34,2:228)।
যেমন- মহিলাদের নামাজের কাতার পুরুষদের পিছনে উত্তম, অবশ্য যদি তারা পুরুষের সঙ্গে নামাজের সুযোগ পায়।
2):- তাদের মর্যাদা পুরুষের অর্ধেক (Quran 2:282,4:11, Sahih Bukhari 3:48:826,1:142)।
যেমন- কোন পুরুষ শিশুর জন্য আকিকা বা পশু বলির ক্ষেত্রে বড় কোন পশু জবাই বা বলি দেওয়া হল কিন্তু নারী শিশুর ক্ষেত্রে ছোটখাট পশু হলেও চলে। আবার দুজন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সমতুল্য।
3):- রজ্বচক্র চলাকালীন তারা অপবিত্র (Quran 2:222,Al-Tabari vol.1p.280) হজ্ব করার অয্যোগ্য (Sahih Bukhari 1:6:302)।
উল্লেখ্য তারা অপবিত্র বলেই দরগা,মসজিদে তাদের প্রবেশ নিষিদ্ধ।
4):- তারা পুরুষের শস্যক্ষেত্র এবং পুরুষ যেমন ইচ্ছা তেমন করে গমন করতে পারবে। (Quran 2:223, Abu Dawud 11:2138)।
নারীরা পুরুষদের চাষের জমি এর থেকে আর উচ্চ সন্মান আর কি হতে পারে কি বলেন মুমিনা বোনেরা? অর্থাৎ ইসলামে দৃষ্টিতে নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই তাই পুরুষ নারীকে চাহিদা পূরণ করতে যেমন ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারে। যেমন ইচ্ছা যৌন বস্তু হিসাবে ব্যবহার করতে পারে এখানে নারীর ইচ্ছা অনিচ্ছার কোন মূল্য নেই। আসলে যারা মানুষই নয় শস্যক্ষেত্র তাদের চিন্তা চেতনার আবার দাম কি থাকতে পারে?
5):- নেতৃত্ব দেওয়ার অয্যোগ্য (Sahih Bukhari 9:88:219)।
এই কারণে কোন নারীর নেতৃত্বে থাকা ধর্ম বিরুদ্ধ। তাই সুলতানা রাজিয়াকে হত্যা করা হয়েছিল। আবার পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেনেজির ভুট্টোকে শুধুমাত্র নারী হওয়ার কারণেই কট্টরপন্থী সংগঠনরা হত্যা করে। ইহাই ইসলামি সহি মর্যাদা? আমার প্রশ্ন ভারতের মহিলা প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী কি দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারেন নি?
তাহলে যোগ্য নারীদের কি কোন মূল্য নেই এই ধর্মে?
6):- পুরুষ পারবে চারজন নারী কে বিয়ে করতে (Quran 4:3)।
কিন্তু নারীর পুরুষটি পাগল হলেও, দুশ্চরিত্র হলেও, শারীরিক দিক থেকে অক্ষম হলেও তাদের অন্য বিয়ে করা হারাম। বরং বলা আছে তোমাদের তাদের নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
7):- সর্বদা নিজেদের আবদ্ধ রাখতে হবে পর্দায় (Sahih Bukhari 5:59:462,6:60:282)।
এর পিছনে যুক্তি দেওয়া হয়-“নারী মাত্রই লোভনীয় বস্তু, তাদের দেখলেই মনে কাম জাগ্রত হয়, দুনিয়াতে যত যুদ্ধ হয় তার কারণ নারী, ধন ও জমির জন্যই। তন্মধ্যে নারী অন্যতম কারণ”। এখানে আমার প্রশ্ন নারীর কাছেও তো পুরুষ লোভনীয়। সুন্দর পুরুষ দেখলে নারীর মনে ও কাম আসে তাহলে পুরুষদের পর্দা করতে হচ্ছে না কেন? আর যুদ্ধ হয় অনেক কারণে নারীদের জন্য যুদ্ধ হয় তাই নারীকে পর্দা করতে হবে এটা বর্বরতা নয় কি? এটা কোন সুস্থ মানুষের চিন্তা হতে পারে কি?
আসলে নবী মহম্মদের বহু স্ত্রী ও দাসী ছিল। তিনি পালক পুত্র জায়েদের স্ত্রী জয়নাব কে ভাগিয়ে বিয়ে করেন; তাই তার সর্বদা মনে এই দুশ্চিন্তা দেখা যেত যদি কেউ আমার স্ত্রীদের ও ভাগিয়ে নিয়ে যায়! তাই সাহাবিরা নবীর বাড়িতে খাদ্য গ্রহণ করার পর নবী পরিবারের অনেকের সঙ্গেই গল্প গুজব করত। সংকীর্ণ চিন্তা চেতনার নবী বিষয়টিকে সহজ ভাবে না নিয়ে সর্বদা এই চিন্তা করত এই যদি কেউ আমার স্ত্রী দের ভাগিয়ে নিয়ে যায়। তাই তিনি আল্লার নামে কোরানের আয়াত আনলেন এবং তাদের পর্দার মধ্যে আবদ্ধ থাকার বিধান আনলেন। এখন মুমিনা বোনেরা এই ঘটনা গুলি না জেনেই নেকি বা পূর্ণ্য লাভের আশায় পর্দা করে!
8):- তারা কুকুরের সমতুল্য (Sahih Bukhari 1:9:490,1:9:493,1:9:486 Sahih muslim 4:1032,4:1034,4:1038-39 Abu Dawud 2:704)।
মুমিনা নারীদের এর থেকে বেশি সন্মান আর কি ভাবে দিতে পারে; কি বলেন আপনারা ?
9):-তারা শয়তানের রূপ (Sahih muslim 8:3240)।
উল্লেখ্য- এক নারীকে দেখে আমাদের পেয়ারের নবীজীর ঈমান দন্ড খাঁড়া হয়ে যায় তিনি বাড়ি ফিরে তার স্ত্রী জয়নাবের কাছে যান। জয়নাব তখন একটা চামড়া টান করছিল; এই সময় নবী তার সঙ্গে সহবত করেন। বাইরে এসে সাহাবিদের উদ্দেশ্যে বলেন শয়তান আসে নারীর বেশে! অর্থাৎ নারী মানেই কামের বস্তু এর থেকে বেশি সন্মান আর কি কিছু হতে পারে?
10):- মৃত্যুর পর তাদের অধিকাংশের জন্য রয়েছে দোজখের আগুন (Sahih Muslim 36:6596,36:6597, Sahih Bukhari 7:62:124,1:2:29,7:62:124,2:18:161)।
হায়রে কপাল! এত মানামানির পরও নারীদের বেশির ভাগই দোজোখ বাসী হবে, এ কি ধরণের ইনসাফ?
তা হলে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এই ধর্মে নারীদের কি রকম সন্মান দেওয়া হয়েছে? ফিরে আসি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে, এই দরগার ট্রাস্টিরা মহিলাদের দরগায় প্রবেশে নিষেধের জন্য আর ও কারণ হিসাবে দেখিয়েছেন-“ধর্মস্থলে মেয়েদের যাতে শারীরিক বা যৌন নিগ্রহের স্বীকার হতে না হয় তাই এই পদক্ষেপ” তাহলে বুঝুন এদের মানসিকতা, মনন, রুচিবোধ। “মন্দির ঘরে কে? আমি তো কলা খাইনি”। এখন বুঝুন এই সমস্ত জায়গায় মহিলারা যাবেন কি করে?
আমার প্রশ্ন বিশ্বের বিভিন্ন ধর্মের মেয়েদের থেকে কি মুসলিম মেয়েদের শারীরিক গঠন কিছু আলাদা? মুসলিম মেয়েদের রক্ত কি আলাদা? যেখানে, অন্যান্য সব ধর্মের সকল মেয়েরা মন্দির, গির্জা, গুরুদ্বারে সিনাগগ ইত্যাদিতে যায়, সেখানে একমাত্র মুসলিম মেয়েরাই তা পরবে না কেন? আসলে ধর্মে বর্ণিত আছে-“মেয়েদের বাড়িতে নামাজ পড়া উত্তম”। আমার প্রশ্ন 1400 বছর আগের চিন্তাধারা আর বর্তমান বিশ্বের জীবনযাত্রার আকাশ পাতাল তফাত, তাই এগুলি মানার আদেও কি কোন প্রয়োজন আছে? এই প্রথাগুলি কি মুসলিম নারীদের এবং মুসলিম সমাজ এর পিছিয়ে পড়ার বর্হিপ্রকাশের স্বরূপ নয়?
অনেক মুমিন ভাইয়েরা বলবেন এগুলি ঐতিহ্য, করতে নেই তাই করিনা? তাদের উদ্দেশ্যে বলি সৌদিআরবে মেয়েদের গড়িচালানো নিষিদ্ধ, ভোট দেওয়া নিষিদ্ধ, মেয়েরা একা বড়ির বাইরে যাওয়া নিষিদ্ধ। তাহলে এই ঐতিহ্যগুলি আমাদের বর্তমান সমাজ গ্রহণ করেনি কেন? আধুনিক মুসলিম নারীরা আপনারা কি গ্রহণ করবেন এই ঐতিহ্য? উল্লেখ্য সৌদিনারীরা আন্দোলনের মাধম্যে গাড়ি চালানো সহ অনেক দাবি আদায়ে সমর্থ হয়েছে। তাদের অভিনন্দন জানাই।অনেক মুমিন ভাইয়েরা বলবেন ধর্মে এগুলি আছে, কেতাবে এগুলি আছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলি- “ধর্মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য ধর্ম”। “কেতাবের জন্য মানুষ নয়,মানুষের জন্য কেতাব”। এতএব যুগে যুগে মানুষ এই ধর্মের শিকল ছিড়েছে এবং তা অমান্য করে বেরিয়ে এসেছে। মোল্লা, মুফতিরা কোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে বলছে, “ধর্মীয় ব্যাপারে কোর্টের রায় দেওয়া উচিত নয়, তা ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে”। আসাধারণ যুক্তি! ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগবে বলে যদি চুপ করে বসে থাকা যায়- তাহলে কি সতীদাহের মত জঘণ্য প্রথা নিষিদ্ধ হত? চালু হত বিধবা বিবাহ?
যেমন- বহু আন্দোলনের পর মহারাষ্ট্রের শনিশিঙ্গনাপুর মন্দিরে(ভারতে) 400 বছরের প্রথা ঘুচিয়ে মেয়েরা মন্দিরে প্রবেশ করেছে। মুসলিম মেয়েদের লড়াইকে অভিনন্দন জানাই তারা দরগায় প্রবেশের অধিকার অর্জন করবেই। এখানে প্রশ্ন শুধু দরগা বা মন্দির নয়। এটা প্রশ্ন সমস্ত মহিলাদের অধিকারের। মহিলাদের চাকরি, শিক্ষা, সমাজিক মর্যদার প্রতীকী লড়াই। মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার কথা বলতে গিয়ে- বেগম রোকেয়াকে বেশ্যা বলে শুনতে হয়েছে। তসলিমা নাসরিনকে হতে হয়েছে দেশান্তরী। কাজী নজরুল ইসলামকে শুনতে হয়েছে কাফের।
আমার প্রশ্ন মডারেট মুসলিম নারীদের আপনারা কি আপনাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন? যদি আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠাতে কোন ধর্মের বেড়ি আসে, সেই বেড়িকে ছিন্ন করে এগিয়ে যান।
পৃথিবীতে কোন অধিকারই কেউ কাউকে দেয় না, অধিকার অর্জন করতে হয়। বহু নারীর রক্তের বিনিময়ে পেয়েছেন ভোটাধিকার, কাজের অধিকার, বাঁচার অধিকার। সমস্ত মহিলারা একসঙ্গে নিজেদের অধিকার সম্পর্কে প্রশ্ন করলে কোন পচা ধর্মীয় মতবাদই আপনাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে আপনাদের বঞ্চিত করতে পারবে না। সমাজকে আপনাদের দাবি মানতেই হবে? এই বর্বর সমাজ কে পরিবর্তন হতেই হবে, হতেই হবে…!
☆ বর্তমান দিনে একই সমস্যা দেখা যাচ্ছে কেরলার শবরীমালা মন্দিরে। সেখানে আয়েপ্পা সমর্থকরা বলেন দশ থেকে পঞ্চাশ বছরের মধ্যে কোন মহিলার ওই মন্দিরে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। এতে আয়েপ্পা দেবতার কুমারীত্ব নষ্ট হবে। মানুষ কতটা ধর্মান্ধ ও অন্ধ হলে এই চিন্তা করতে পারে? আসলে এ থেকেই প্রমাণিত প্রতিটি ধর্মই নরীকে ঠিক মানুষ বলে মনে করে না! তারা মনে করে এগুলি কোন উচ্ছিষ্টজীবী প্রাণী। সুপ্রিম কোর্টকে অভিনন্দন এই জঘন্য প্রথা তারা বাতিল করেছেন। তবে ধর্মের ধজ্জাধারি আয়েপ্পা সমর্থকেরা সুপ্রিম কোর্টের আদেশ ও মানতে রাজি নয়; এরা এখনও বিরোধীতায় পঞ্চমুখ। বিজেপির মত দল ভোট ব্যাঙ্কের আশায় এই ধর্মান্ধদের সমর্থন করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক! তবে কিছু মহিলারা মন্দিরের এই বদ্ধ প্রথা ভঙ্গ করতে নিরন্তর সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। আশারাখি তারা এই উদ্দেশ্যে সফল হবেই! কারণ ইতিহাস সাক্ষী কোন অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে নিরন্তর সংগ্রাম করলে তা কখনও বিফলে যায় না। বাম শাসিত কেরলা সরকারের কাছে অনুরোধ এই লক্ষ্যে তারা যেন আরও সদর্থক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মন্দির বা দরগাতে প্রবেশাধিকার মানেই নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা হল এটা আমি মনে করি না। তবুও একটি বদ্ধ সংস্কারের ধ্বংস সাধন নারীর ক্ষমতায়নের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে গণ্য করাই যেতে পারে!
(বি:দ্র:- পোস্টটি হাজী আলি দরগায় নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে লেখা এবং আনন্দের বিষয় হল নারীরা হাজী আলি দরগাতে প্রবেশের অধিকার লাভ করেছে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পোস্টটি আজও প্রাসঙ্গিক।)
No comments