কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো আমাদের পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ?
কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিলো আমাদের পৃথিবী ও অন্যান্য গ্রহ?
![]() |
পৃথিবী সৃষ্টির সময় |
সূর্যের চেয়ে তিন গুণ বেশি ভরের নক্ষত্রসমূহের অভ্যন্তরে হাইড্রোজেনের সংযোজন বিক্রিয়ায় তৈরি হয় হিলিয়াম, হিলিয়ামের সংযোজনে তৈরি হয় কার্বন এবং সেই কার্বনের সংযোজনে তৈরি হয় লোহা। লোহা তৈরির মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীণ বিক্রিয়াসমূহের পরম্পরার পরিসমাপ্তি ঘটে, কারণ এর পরের বিক্রিয়াটি তাপশোষী। এমনই এক সময়ে নক্ষত্রের অভ্যন্তরস্থ বহির্মুখী চাপ যথেষ্ট পরিমাণ কমে যাওয়ায় এটি আর মহাকর্ষীয় আকর্ষণ বলকে ঠেকিয়ে রাখতে পারে না, ফলে নক্ষত্রে ঘটে এক প্রচণ্ড অন্তস্ফোটন (Implosion)। নক্ষত্রটির বেশিরভাগ ভরই এর কেন্দ্রে সংকুচিত হয়ে পড়ে, আর গ্যাসীয় বাতাবরণটি ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে প্রবলবেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনাই সুপারনোভা বিস্ফোরণ হিসেবে পরিচিত। এই ধরনের বিস্ফোরণে বিপুল পরিমাণ শক্তি নির্গত হয় এবং সংশ্লিষ্ট নক্ষত্রটি সাময়িকভাবে পুরো ছায়াপথের চেয়েও বেশি উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। কেন্দ্র ছাড়া অবশিষ্ট অংশটুকু বা আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলাকণার মেঘ অর্থাৎ যা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তা নেবুলায় পরিণত হয়।
একইভাবে সৌর নেবুলা সৃষ্টি হয়েছিল। যা প্রায় ১ আলোকবর্ষ এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। এরপর এই বিশাল আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলাকণার মেঘের ঘূর্ণনবেগ বাড়ার সাথে সাথে এটি সংকুচিত হতে শুরু করলো। ফলে আস্তে আস্তে মেঘের আকৃতি ছোট হতে থাকে । এটি চ্যাপ্টা আকৃতির সাথে সাথে প্রায় ১০০ জ্যোতির্বিদ্যার একক (১ জ্যোতির্বিদ্যার একক= ১৪৯৬০০০০০ কি.মি) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত হয়ে যায়।
নীহারিকার মেঘের কেন্দ্র আশেপাশের অন্য অংশ হতে বেশি ঘনত্বপূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে খুব দ্রুত সংকুচিত হতে থাকে। সেখানেই তৈরি হয়ে থাকে আমাদের প্রোটোসূর্য। ধীরে ধীরে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এটি হতে দৃশ্যমান আলো নির্গত হতে থাকে । এরপরে তাপমাত্রা আরও অনেক বাড়ার পর নিউক্লিয় বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। সৃষ্টি হয়ে যায় আমাদের সূর্য । আমাদের সূর্য মেঘটির কেন্দ্রের স্থান দখল করে ছিল। এরপর আশেপাশের সকল বস্তু চাকতির ন্যায় আকৃতি ধারণ করতে শুরু করে। আশেপাশের সকল বস্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে শুরু করে। তখন অনুবীক্ষণিক ধূলিকণার বস্তুগুলো একে অপরকে আরও বেশি আকর্ষণ করতে শুরু করে।
স্বল্প ভররের বস্তু হতে অধিক ভরের বস্তুর সৃষ্টি হতে থাকে। আস্তে আস্তে বস্তুগুলো বড় হতে হতে একসময় গ্রহাণুতে রূপান্তর হয়ে পড়ে। এর থেকেও বড়গুলো গ্রহে পরিণত হয়। আমাদের পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহগুলো ঠিক এভাবেই সৃষ্টি হয়।
আমাদের পৃথিবী (মি.পার্ফেক্ট) যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তু বা পাথর দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে বেশ অনেকগুলো বস্তুদ্বয়ের প্রয়োজন হয়েছিল এটি সৃষ্টিতে। যদি মনে করা হয়,প্রতিটি বস্তু বা পাথর গোলাকার এবং এদের ব্যাস ১০০ কি.মি হয় যার ফলে এদের ঘনত্ব হয় 3500 kg/m^3
হয় । তবে এরূপ ৩ মিলিয়নটি পাথর মিলে তৈরি হবে আমাদের পৃথিবী। ব্যাপারটার গাণিতিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
আমরা জানি, বস্তুটির মোট ভর হবে,
M=ρ.V
এখানে,
ρ হলো বস্তুটির ঘনত্ব (Density)। কোন বস্তুর একক আয়তনের ভরকে তার ঘনত্ব (Density) বলে। ঘনত্বকে সাধারণত (ρ) (গ্রীক অক্ষর 'রো'-এর লোয়ার কেস) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি সাধারণ Kg/m^3 দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
V হলো আয়তন(Volume)। ত্রিমাত্রিক স্থানে একটি বস্তু যে আকার ধারণ করে তাকে আয়তন বলে। এটি মিটার কিউবে (M^3) হিসাব করা হয়। কোনো গোলকের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল হবে 4πr^2 এবং এর আয়তন 4/3πr^3 ।
তাহলে ভর বের করতে হবে আমাদের আগে আয়তন বের করতে হবে। আয়তন বের করতে হলে বস্তুটির ব্যাসার্ধ বের করতে হবে।
ব্যাস যেহেতু 100 k.m
সুতরাং ব্যাসার্ধ= 100/2=50 K.m
V=4/3πr^3
V=4/3×3.14164×50^3 km^3
V= 5.2× 10^5 km^3
আমরা আয়তন পেয়ে গেছি। আর ঘনত্ব আগেই বলাছিল । তাহলে,
M=ρ.V
M=3500 kg/m^3 5.2× 10^5 km^3
M≈2×10^9 kg/m^3.km^3
আমরা একটি পাথরের ভর পেয়ে গেছি। এবার কিলোমিটারকে মিটারে পরিণত করি।
M=2×10^9 kg/m^3×km^3×(1000m/km)^3
M=2×10^9 kg/m^3×km^3×1×10^9 m^3/km^3
M=2×10^18 kg
এবার আমরা সর্বশেষ কাজটুকু করবো।
আমরা জানি,
পৃথিবীর ভর,Me=6×10^24 kg
আবার,
Number=Me/Mp (Me=Mass of earth, Mp= Mass of planetesimal)
Number=6×10^24 kg/2×10^18 kg
Number=3×10^6
Number=3000000
তাহলে খুব সুন্দর গাণিতিকভাবে আমরা পেয়ে গেলাম, ১০০ কি.মি ব্যাসের ৩ মিলিয়ন পাথর দ্বারা পৃথিবী আকৃতির একটি গ্রহ সৃষ্টি হওয়া সম্ভব হবে ।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য। সবাই মিম খুব পছন্দ করে, লাইক,শেয়ার দেয়। কিন্তু যেগুলো আমাদের নিজেদের জানা দরকার এবং অন্যদেরও জানানো দরকার ওইগুলো খুব স্বল্প সংখ্যকরাই পছন্দ করছে। বিজ্ঞানের ভাষা হচ্ছে গণিত। গণিত ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গুর মতো। আর বিজ্ঞানের এই গুরুত্বপূর্ণ শাখাটিও (জ্যোতির্বিদ্যা বা জ্যোতির্বিজ্ঞান) এই ধারার ব্যতিক্রম নয়। এতেও গণিত অসাধারণ ভূমিকা রাখে। তাই গণিতকেও ভালোবাসতে হবে,চর্চা করতে হবে।
■ রেফারেন্স: Schaum's Outline of Astronomy - Stacey Palen
নীহারিকার মেঘের কেন্দ্র আশেপাশের অন্য অংশ হতে বেশি ঘনত্বপূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে খুব দ্রুত সংকুচিত হতে থাকে। সেখানেই তৈরি হয়ে থাকে আমাদের প্রোটোসূর্য। ধীরে ধীরে এর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং এটি হতে দৃশ্যমান আলো নির্গত হতে থাকে । এরপরে তাপমাত্রা আরও অনেক বাড়ার পর নিউক্লিয় বিক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। সৃষ্টি হয়ে যায় আমাদের সূর্য । আমাদের সূর্য মেঘটির কেন্দ্রের স্থান দখল করে ছিল। এরপর আশেপাশের সকল বস্তু চাকতির ন্যায় আকৃতি ধারণ করতে শুরু করে। আশেপাশের সকল বস্তু সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরতে শুরু করে। তখন অনুবীক্ষণিক ধূলিকণার বস্তুগুলো একে অপরকে আরও বেশি আকর্ষণ করতে শুরু করে।
স্বল্প ভররের বস্তু হতে অধিক ভরের বস্তুর সৃষ্টি হতে থাকে। আস্তে আস্তে বস্তুগুলো বড় হতে হতে একসময় গ্রহাণুতে রূপান্তর হয়ে পড়ে। এর থেকেও বড়গুলো গ্রহে পরিণত হয়। আমাদের পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহগুলো ঠিক এভাবেই সৃষ্টি হয়।
আমাদের পৃথিবী (মি.পার্ফেক্ট) যদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বস্তু বা পাথর দ্বারা সৃষ্টি হয়ে থাকে তবে বেশ অনেকগুলো বস্তুদ্বয়ের প্রয়োজন হয়েছিল এটি সৃষ্টিতে। যদি মনে করা হয়,প্রতিটি বস্তু বা পাথর গোলাকার এবং এদের ব্যাস ১০০ কি.মি হয় যার ফলে এদের ঘনত্ব হয় 3500 kg/m^3
হয় । তবে এরূপ ৩ মিলিয়নটি পাথর মিলে তৈরি হবে আমাদের পৃথিবী। ব্যাপারটার গাণিতিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
আমরা জানি, বস্তুটির মোট ভর হবে,
M=ρ.V
এখানে,
ρ হলো বস্তুটির ঘনত্ব (Density)। কোন বস্তুর একক আয়তনের ভরকে তার ঘনত্ব (Density) বলে। ঘনত্বকে সাধারণত (ρ) (গ্রীক অক্ষর 'রো'-এর লোয়ার কেস) দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এটি সাধারণ Kg/m^3 দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
V হলো আয়তন(Volume)। ত্রিমাত্রিক স্থানে একটি বস্তু যে আকার ধারণ করে তাকে আয়তন বলে। এটি মিটার কিউবে (M^3) হিসাব করা হয়। কোনো গোলকের পৃষ্ঠদেশের ক্ষেত্রফল হবে 4πr^2 এবং এর আয়তন 4/3πr^3 ।
তাহলে ভর বের করতে হবে আমাদের আগে আয়তন বের করতে হবে। আয়তন বের করতে হলে বস্তুটির ব্যাসার্ধ বের করতে হবে।
ব্যাস যেহেতু 100 k.m
সুতরাং ব্যাসার্ধ= 100/2=50 K.m
V=4/3πr^3
V=4/3×3.14164×50^3 km^3
V= 5.2× 10^5 km^3
আমরা আয়তন পেয়ে গেছি। আর ঘনত্ব আগেই বলাছিল । তাহলে,
M=ρ.V
M=3500 kg/m^3 5.2× 10^5 km^3
M≈2×10^9 kg/m^3.km^3
আমরা একটি পাথরের ভর পেয়ে গেছি। এবার কিলোমিটারকে মিটারে পরিণত করি।
M=2×10^9 kg/m^3×km^3×(1000m/km)^3
M=2×10^9 kg/m^3×km^3×1×10^9 m^3/km^3
M=2×10^18 kg
এবার আমরা সর্বশেষ কাজটুকু করবো।
আমরা জানি,
পৃথিবীর ভর,Me=6×10^24 kg
আবার,
Number=Me/Mp (Me=Mass of earth, Mp= Mass of planetesimal)
Number=6×10^24 kg/2×10^18 kg
Number=3×10^6
Number=3000000
তাহলে খুব সুন্দর গাণিতিকভাবে আমরা পেয়ে গেলাম, ১০০ কি.মি ব্যাসের ৩ মিলিয়ন পাথর দ্বারা পৃথিবী আকৃতির একটি গ্রহ সৃষ্টি হওয়া সম্ভব হবে ।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য। সবাই মিম খুব পছন্দ করে, লাইক,শেয়ার দেয়। কিন্তু যেগুলো আমাদের নিজেদের জানা দরকার এবং অন্যদেরও জানানো দরকার ওইগুলো খুব স্বল্প সংখ্যকরাই পছন্দ করছে। বিজ্ঞানের ভাষা হচ্ছে গণিত। গণিত ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গুর মতো। আর বিজ্ঞানের এই গুরুত্বপূর্ণ শাখাটিও (জ্যোতির্বিদ্যা বা জ্যোতির্বিজ্ঞান) এই ধারার ব্যতিক্রম নয়। এতেও গণিত অসাধারণ ভূমিকা রাখে। তাই গণিতকেও ভালোবাসতে হবে,চর্চা করতে হবে।
■ রেফারেন্স: Schaum's Outline of Astronomy - Stacey Palen
No comments