ধারনায় মানবের উৎপত্তি


এই চীনাদের ধারনা ছিলো তাদের প্রথম মানব আজ থেকে ১০ লক্ষ বছর আগে পৃথিবীতে এসেছিলো। যেখানে ইসলাম, ইহুদী আর খ্রিষ্টান ধর্ম সম্পর্কে এবং তার আদম সম্পর্কে বলতে গেলে নির্দিষ্ট কোন সময়কাল পাওয়া যায় না। তবে আদমের একই ঘটনা একই বিষয় বাইবেলে যেভাবে লেখা আছে তা আবার মুসলিম জাতি মানতে চায় না। ইসলামে আদম সম্পর্কে শুধু এটুকু পাওয়া যায় যে, আদম থেকে মোহাম্মদ ৯০ প্রজন্ম ছিলো এর মধ্যে ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী রাসুল দুনিয়াতে এসেছিলো মতান্তরে ২ লক্ষ ২৪ হাজার। আবার অনেকের মতে সেই যুগে প্রতি বছর আনুমানিক ২৬ জন করে নবী রাসূল দুনীয়াতে এসেছেন। সেই হিসেব করে যদি বলা যায় যে, আদমের পৃথিবীতে পদার্পণ খ্রিষ্টান, ইহুদি ও পারস্য ধর্ম পাশাপাশি ইসলাম ধর্ম মতে খ্রিষ্টপূর্ব ৪০০৪ বা মতান্তর এ ৪০২৬ তাহলে আমার ফেসবুক ওয়ালটিকে অনেকেই কাঠাল পাতা ভাবতে থাকে। যার প্রমান আমার দুইদিন আগের একটি মমি বিষয়ক লেখাতেই দেখুন। এখানে আমার একটি প্রশ্ন কেন আমরা সবাই এটা জানতে চেষ্টা করি না, কেন এই মানব আগমন নিয়ে এতো লুকোচুরি করা হয়েছে। আগেই আমার জ্ঞান এর সীমা যাচাই বাছাই করতে সবাই উঠেপড়ে লাগে। যাক সে কথা আমি নাকি একটি ধর্ম নিয়েই শুধু লেখি তাই তাদের উদ্দেশ্য আজ একটি আনকমন ধর্ম নিয়ে লিখবো। যেখানে বলা আছে মানব আগমনের কথা ইসলাম থেকেও যা ৯ লক্ষ ৯০ বা ৯৪ হাজার বছর আগে।
চীনের একটি নৈতিক ও দার্শনিক বিশ্বাস ও ব্যবস্থা যা বিখ্যাত চৈনিক সাধু কনফুসিয়াসের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। অর্থাৎ কনফুসিয়াস হলেন কনফুসীয় ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা। এটি মূলত নৈতিকতা, সমাজ, রাজনীতি, দর্শন এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও চিন্তাধারাসমূহের সম্মিলনে সৃষ্ট একটি জটিল ব্যবস্থা যা একবিংশ শতাব্দী পর্যন্ত পূর্ব এশিয়ার সংস্কৃতি ও ইতিহাসে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। অনেকের মতে এটি পূর্ব এশিয়ার দেশসমূহের রাষ্ট্র ধর্ম হিসেবে স্বীকৃত হতে পারে। কারণ এই দেশগুলোতে এখন কনফুসীয় আদর্শের বাস্তবায়নের উপর বিশেষ জোর দেয়া হচ্ছে। কনফুসিয় মতবাদ একটি নৈতিক বিশ্বাস এবং দর্শন। এটাকে ধর্ম বলা হবে কিনা এই নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে মতভেদ আছে। অনেক শিক্ষাবিদ কনফুসিয় মতবাদকে ধর্ম নয় বরং দর্শন হিসেবে মেনে নিয়েছেন।কনফুসিয় ধর্মের মূলকথা হচ্ছে মানবতাবাদ।
প্রাচীন চীনে প্রচলিত বেশ কিছু ধর্মের মধ্যে কনফুসিয়াস ধর্ম ছিলো একটি প্রধান ধর্ম। হাজার হাজার বছর আগে যখন এই অঞ্চলের মানুষেরা বসতি স্থাপন করতে শুরু করলো তখন চৈনিক সাধু কনফুসিয়াস এর দারা এই ধর্মের সৃষ্টি হয়েছিলো। বর্তমানে অনেক দার্শনিক এই ধর্মকে দর্শন বলে মেনে চলেন। তারা একে ধর্ম বলেন না। তবে পৃথিবীর প্রচলিত ধর্ম গুলির ভেতরে এই চৈনিক দের কনফুসিয়াস ধর্মে কুসংস্কার কিছুটা কম দেখা যায়। যার কারনেই অনেকে একে ধর্ম না বলে দর্শন বলে থাকেন।
প্রচলিত কয়েকটি ধর্মের মতো তারাও বিশ্বাস করে না যে, আজ থেকে ৭০ হাজার বছর আগে কিছু হোমো স্যাপিয়েন্স এর ছোট ছোট দল ইউরোপ ও এশিয়ার কিছু অঞ্চলে ঢুকে পড়ে। যাদের নিয়ান্ডারথাল বলা হয়ে থাকে। এটা না বিশ্বাস করার কারনে তারা ভাবতে থাকে এখানেই তারা জন্ম গ্রহন করেছে এবং এর বাইরে তাদের কোন সম্পর্ক নেয়। কারন চীনের এমন কোন ধর্ম গ্রন্থ নেই যেখানে তার উল্লেখ আছে। হিন্দু, ইসলাম, খৃষ্টান ও ইহুদি ধর্মের মতো তারা মানব সৃষ্টি,পৃথিবী সৃষ্টি ও জগত সৃষ্টি সম্পর্কে যে ধর্ম গ্রন্থ গুলি তাদের ভেতরে প্রচলিত সেগুলিই মেনে চলে।
প্রাচীন চীনাদের বিশ্বাস যে, তারা শুরু থেকেই চীনে ছিলো মানে সেখানকার আদিম অধিবাসী। তারা যে অন্য কোন দেশ বা অঞ্চল থেকে হাজার হাজার বছর আগে সেখানে গিয়ে বসতি স্থাপন করে তার উল্লেখ তাদের কোন ধর্মীয় কিতাব বা ঐশ্বরিক কিতাবে নেই। তাদের ধারনা মুসলিম, খ্রিষ্টান, পারস্য ও ইহুদী জাতির মতো আদম টাইপের একজন তাদের মধ্যেও ছিলো। চীন দেশের ঈশ্বর প্রথম যে মানুষটিকে সৃষ্টি করেছিলেন তার নাম ছিলো “পাং-কু”। তাদের ধারনা পাং-কু এর সৃষ্টি বা উৎপত্তির দশ লক্ষ বছর পরে চীনে দশটি রাজবংশ রাজত্ব করেছিলো। প্রথমে রাজত্ব করেছিলো দেবতাগন, তারপর দ্বিতীয় রাজত্ব করেছিলো তার উপদেবতাগন, আর তৃতীয় রাজত্ব করেছেন নর বা মানুষগন, চতুর্থ রাজত্ব করেন জুচান গন, পঞ্চম রাজত্ব করেন সুইজন বা অগ্ন্যুৎপাদক গনের রাজত্ব ইত্যাদি।
ইতিহাসে পাওয়া যায় চীনের প্রথম রাজার নাম ছিলো “ফু-হিয়া” এবং তার রাজত্বকাল ছিলো ( পাশ্চাত্য মতে ) ২৮৩২ – ২৩৩৮ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ এর মধ্যে। তবে মত ভেদে কোন ভিন্নতা না পাওয়া যাওয়ায় এটাই এখনও চীনের সৃষ্টি প্রকরনের প্রাচীন বিবরন।
দক্ষিন আফ্রিকার লেখক ” উইলবার স্মিথ” এর লেখা মিশরীয় অনবদ্য কাহিনী “রিভার গড” যা আজ থেকে ৩৫০০ বছর আগে মিশরীয় এক ক্রিতদাশের লিখে যাওয়া ব্যক্তিগত ডায়েরী টাইপের কিছু প্যাপিরাস এর খন্ড থেকে উদ্ধারিত। এই রিভার গডেও তিনি চাইনিজ এক হিক্স জাতির কথা উল্লেখ করেছেন যা ওই ক্রিতদাশের লেখা ছিল। সেখানেও চৈনিকদের অসাধারণ কিছু জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায় যা তখনকার মিশরীয়দের জন্য ছিলো আশীর্বাদ। পাশাপাশি ইসলামের কোথাও লেখা আছে “জ্ঞান আহরনের জন্য সদুর চীন দেশে যাও” এমন কথা। তার মানে বোঝা যায় যে ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতাদের সাথে অনেক অনেক বছর আগে থেকেই এই জাতির সাথে পরিচয় ছিলো।

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.