বৃদ্ধাশ্রম

#বৃদ্ধাশ্রম 
- থরথরে শরীর নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছি খুব কষ্টে।এখন আর চোখে তেমন দেখিনা। ঝাপসা দৃষ্টি। সবকিছু কুয়াশায় আবদ্ধ। চশমাটা চোখ থেকে খুলে সাদা কাপড়ের আঁচল দিয়ে চশমার মোটা ফ্রেম দুটো মুছে আবার যথাস্থানে চশমাটা লাগিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার দিকে তাকালাম।
.
হঠাৎ মনের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে জানান দিচ্ছে এই লোকটাতো অন্য কেউ নয়। আমারই ছেলে জিহাদ। কিন্তু ও এখানে কেন ? এই জায়গাটা তো ওর জন্য নয়।
.
- মা, মাগো, মাফ করে দিও মা। আমি তোমার ছেলে জিহাদ।মা, যুদ্ধের সময় হয়েছি বলে নামটা জিহাদ রেখেছো,কিন্তু মা প্রকৃত যুদ্ধ আমি করতে পারিনি।যদি যুদ্ধ করতে পারতাম তাহলে মা তোমার জায়গা এই বৃদ্ধাশ্রমে হতো না।
.
- বাবারে এটা আমার কপাল। কিন্তু তুই বৃদ্ধাশ্রমে কি করছিস? তুই তো বাবা মস্ত ফ্ল্যাটে থাকার কথা।
.
- মা, মস্ত ফ্ল্যাট'টা আর আমার নেই।
সেটা এখন তোমার নাতি আর তার বউ এর।
.
- বৌমা কেমন আছেরে বাবা ?
.
- মাগো,তোমার বৌমা যে আর বেঁচে নেই।
আর আমার স্থান তো তুমি দেখতেই পারছো।
.
- জিহাদের কথা শুনে চোখের অশ্রু ক্রমশ গতিবেগে গড়িয়ে মাটি স্পর্শ করছে। আমি তো তোদের জন্য এমন দোয়া করিনিরে বাবা।তাহলে কেন তোকেও একই পথের পথিক হতে হলো ?
.
- মা,এটা তো পূর্বেই ঠিক হয়েছিলো।কেবল সময়ের ব্যবধান ছিলো। তখন বুঝিনি বৃদ্ধাশ্রমে থাকার কষ্ট কি ? এখন ঢের বুঝতে পারছি। মাগো, বাবু এখন আর আমার খোঁজ নেয় না।
.
- কিছুই বললাম না।
জিহাদের কথাগুলো শুনছি আর দেখছি জিহাদের মুখটা।
.
বারবার মনে পড়ছে,
আশ্রমের এই ঘরটা ছোটো জায়গা অনেক বেশি,
খোকা আমি দু'জনেতে থাকবো পাশাপাশি।
- উম্মে হাবিবা তানহা

Image may contain: one or more people

No comments

Theme images by 5ugarless. Powered by Blogger.